এইবেলা, মৌলভীবাজার ::
কেন্দ্রীয় ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারা দেশের ন্যায় মৌলভীবাজারেও বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী মৌভলীবাজার জেলা শাখা। দলের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মজলুম জননেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে মঙ্গলবার ( ১৮ ফেব্রুয়ারি) মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পরে এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
মৌলভীবাজার জেলা আমীর ইঞ্জিনিয়ার মো: শাহেদ আলীর সভাপতিত্বে ও জেলা সেক্রেটারী মো: ইয়ামীর আলীর পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য, সাবেক জেলা আমীর মো: আব্দুল মান্নান, প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও সাবেক জেলা আমীর দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম মতলিব, জেলা জামায়াতের মজলিসে শুরা ও কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আমিনুল ইসলাম, সিলেট মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী এডভোকেট মো: আব্দুর রব, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুর রহমান, মৌলভীবাজার পৌরসভার আমীর হাফেজ তাজুল ইসলাম, সদর উপজেলা আমীর ফখরুল ইসলাম,
রাজনগর উপজেলা আমীর আবু রাইয়ান শাহীন, কুলাউড়া উপজেলা আমীর আব্দুল মুন্তাজিম, কমলগঞ্জ উপজেলা আমীর মাসুক মিয়া, জুড়ী উপজেলা আমীর আব্দুল হাই হেলাল, বড়লেখা উপজেলা আমীর এমাদুল ইসলাম, ছাত্রশিবিরের মৌলভীবাজার শহর সভাপতি তারেক আজিজ ও জেলা সভাপতি নিজাম উদ্দিন প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, আজ অর্ন্তর্বতী সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের ৬ মাস ১০ দিন অতিবাহিত হচ্ছে। বর্তমান সরকারের আমলে এই প্রথম আজ জামায়াতে ইসলামী রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছে। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনের পর দেশবাসী আশা করেছিল তারা সকল প্রকার জুলুম নির্যাতন থেকে উদ্ধার পাবে। যারা মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটক ছিলেন তারা মুক্তি পাবে। শেখ হাসিনার পতনের পর অনেকে মুক্তি পেলেও মুক্তি পাননি জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মজলুম জননেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম।
দেশবাসী অবগত আছেন যে, আওয়ামী লীগ সরকার বিগত ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জামায়াতের দলীয় কার্যালয় থেকে বের হয়ে বাসায় ফেরার পথে সংগঠনের তদানীন্তন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। রিমান্ডে নিয়ে তাঁর ওপর চরম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে ন্যূনতম চিকিৎসা সেবাটুকুও দেয়া হয়নি।
উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০১২ সালে তিনি জামিনে মুক্তি লাভ করার পর নিজ বাসায় অবস্থানকালে পুলিশ তাঁর বাড়ি ঘেরাও করে রাখে। তাঁর বাড়ির চতুর্দিকে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়। পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও দলীয় সহকর্মীদেরকে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হয়নি। আওয়ামী সরকার জনাব এটিএম আজহারুল ইসলামকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করে আবারো তাঁকে বাসা থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।
বক্তারা আরও বলেন, আওয়ামী সরকার দলীয় লোকদের দ্বারা তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও সাজানো সাক্ষ্য প্রদান করে। একজন সাক্ষী আদালতে বলেছেন যে, তিনি ৭ কিলোমিটার দূর থেকে এবং অপর আরেক সাক্ষী বলেছেন যে, তিনি ৩ কিলোমিটার দূর থেকে ঘটনা দেখেছেন। সাক্ষীদের এই বক্তব্য অবাস্তব ও হাস্যকর। আরেকজন সাক্ষী নিজেকে জনাব আজহার সাহেবের ক্লাসমেট দাবি করে আদালতে আজহার সাহেবের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন।
আদালতে উপস্থাপিত ডকুমেন্ট অনুযায়ী আজহারুল ইসলাম ১৯৬৮ সালে কারমাইকেল কলেজ ত্যাগ করেন। আর কথিত সাক্ষী ১৯৭০ সালে কারমাইকেল কলেজে ভর্তি হন। অতএব, আজহারুল ইসলামকে ঐ সাক্ষী তাঁর ক্লাসমেট হওয়ার যে দাবি করেছেন, তা সর্বৈব মিথ্যা। এ ধরনের মিথ্যা সাক্ষ্যের ভিত্তিতে জনাব এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
বক্তরা বলেন, জনাব এটিএম আজহারুল ইসলাম ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায় ট্রাইবুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল দায়ের করেন। আপিল বিভাগের চারজন বিচারপতির মধ্যে তিনজন বিচারপতি ট্রাইবুনালের রায় বহাল রাখলেও একজন বিচারপতি এ রায়ের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন। এটিএম আজহারুল ইসলাম সেখানেও ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হন।
২০২৪ সালে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যায়। দেশ স্বৈরাচারের কবল থেকে মুক্তিলাভ করে। রাজনৈতিক মিথ্যা মামলায় ফ্যাসিস্ট সরকারের গ্রেফতারকৃত অনেক নেতাকর্মী মুক্তিলাভ করেন। রাষ্ট্রপতির আদেশে অনেককে তৎক্ষণাৎ মুক্তি দেওয়া হয়। দেশবাসী আশা করেছিল যে, চরম জুলুম-নির্যাতনের শিকার এটিএম আজহারুল ইসলাম স্বৈরাচার মুক্ত বাংলাদেশে মুক্তিলাভ করবেন।
কিন্তু অর্ন্তর্বতী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের ৬ মাস ১০ দিন অতিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও জনাব এটিএম আজহারুল ইসলাম মুক্তিলাভ করেননি। জামায়াত স্বৈরশাসনামলে জুলুম এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আর স্বৈরশাসন মুক্ত বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী এখনো বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামলে বিচারিক কার্যক্রমসমূহ সারা বিশ্বে বিতর্কিত, প্রশ্নবিদ্ধ ও প্রত্যাখ্যাত।
স্বৈরাচারের আমলে গ্রেফতারকৃতএটিএম আজহারুল ইসলামকে কারাগারে আটক রাখা তার প্রতি চরম জুলুম ও অন্যায় ছাড়া আর কিছুই নয়। ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে তাঁকে এখনো আটক রাখায় জাতি বিস্মিত ও হতবাক। দেশবাসী স্বৈরাচারের কবল থেকে পরিপূর্ণভাবে মুক্তি চায়।
এই পরিস্থিতিতে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার জন্য অর্ন্তর্বতী সরকারের প্রতি জোর দাবি জানানো হয়। সমাবেশ শেষে একটি বিশাল সুশৃংখল বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয় ।
Leave a Reply