মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ক্লিবডন চা বাগানের শ্রমিক সর্দার রামবচন গোয়ালা (৪০) হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় হত্যার মূল আসামি গোলাপ সতনামী (৩৩) কে আলামতসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামির কাছ থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত লাঠি, ভিকটিমের মোবাইল ফোন, জুতা, লাঠি বাঁধার গামছার টুকরা এবং আসামির মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রামবচন গোয়ালা বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। স্বজনরা খোঁজাখুঁজি ব্যর্থ হলে ২৭ সেপ্টেম্বর কুলাউড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পরদিন সকালে জুড়ীর কাপনাপাহাড় চা-বাগান এলাকায় রক্তের দাগ ও স্যান্ডেল দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। পরে বাবুনালা ছড়া থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
ঘটনার পর পুলিশ সুপার এম.কে.এইচ. জাহাঙ্গীর হোসেন, পিপিএম’ র নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) নোবেল চাকমা ও কুলাউড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজমল হোসেনের তত্ত্বাবধানে জুড়ি থানার ওসি মো. মুরশেদুল আলম ভূঁইয়ার নেতৃত্বে বিশেষ টিম তদন্ত শুরু করে।
গোপন তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় শুক্রবার ০৩ অক্টোবর ভোরে কামিনীগঞ্জ বাজার থেকে গোলাপ সতনামীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যার কথা স্বীকার করে।
আসামি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গোলাপ সতনামী পুলিশকে জানায়, সেদিন সন্ধ্যায় আসামি গোলাপ সতনামী রামবচনকে মদ খাওয়ার প্রস্তাব দেয় এবং মোটরসাইকেলে রত্না চা বাগানে যায়। সেখানে চন্দন নামের এক ব্যক্তিসহ তারা মদ পান করে। এসময় চাকরি ফেরত চাওয়ার প্রসঙ্গ নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয়। রামবচন গোলাপকে গালিগালাজ করলে ক্ষিপ্ত হয়ে সে হত্যার পরিকল্পনা করে। ২০১৭ সালে গোলাপও রামবচনের কারণে চাকরি হারিয়েছিল, তাই তার দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ছিল। রাত আনুমানিক ১০টা ৪০ মিনিটে সাগরনাল চা বাগান থেকে ফেরার পথে বাবুনালা ছড়ার কাছে মোটরসাইকেল থামিয়ে গোলাপ কোদালের হাতল দিয়ে রামবচনের মাথায় একাধিক আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। হত্যার পর গোলাপ সোনারূপা চা বাগানে গিয়ে এক ব্যক্তিকে বিষয়টি জানায়। পরে দু’জনে মিলে লাশ টেনে বাবুনালা ছড়ায় ফেলে দেয় এবং গাছপালা ও মাটি চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়।
এদিকে চা-শ্রমিক সর্দার হত্যার ঘটনায় আটক গোলাপ সৎনামের ফাঁসির দাবিতে উবাগানের শ্রমিকরা শনিবার (৪ অক্টোবর) কাজে না গিয়ে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বাগানের অফিসের সামনে মানববন্ধন করে। পরে বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা বাগানে একটি বিক্ষাভ মিছিল করে।
বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক অজিত গোয়ালার সঞ্চালনায় উক্ত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে একাত্বাতা পোষণ করে বক্তব্য দেন, জয়চন্ডী ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মিলন বৈদ্য, সাবেক চেয়ারম্যান কমর উদ্দিন আহমদ কমরু, উপজেলা বিএনপির নেতা ময়নুল হক বকুল, বদরুল ইসলাম, স্থানীয় ইউপি সদস্য শংকর উরাং, সাবিত্রী রানী রাজভর, সাবেক ইউপি সদস্য সুবাস গোয়ালা, বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মনিরাম উরাং, সাবেক সভাপতি মহোনলাল গোয়ালা ও রামবচন গোয়ালার স্ত্রী হেমন্তি গোয়ালা প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, জয়চন্ডী ইউনিয়নের ক্লিভডন চা-বাগানের সিনিয়র দফা সর্দার রামবচন গোয়ালা সর্বজনপ্রিয় একজন মানুষ ছিলেন। তার সাথে কারো কোন শত্রুতা ছিলনা। এই গোলাপের অরেক সহযোগী এখনও প্রকাশ্যে রয়েছে। তারা গোলাপের ফাঁসি এবং তার সহযোগিকে আটকের জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান।##
Leave a Reply