পিয়ন থেকে কোটিপতি ঘুষ সম্রাট রিয়াজ – এইবেলা
  1. admin@eibela.net : admin :
সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:৫২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
রাজস্ব তহবিলের অর্থ আত্মসাত- বড়লেখা উপজেলা পরিষদের সাঁট মুদ্রাক্ষরিক বরখাস্ত, বিভাগীয় মামলা বড়লেখায় নবপল্লব প্রকল্পের ‘প্রকল্প অবহিতকরণ’ সভা একদল অপকর্ম করে পালিয়েছে, আরেকদল সেই অপকর্মের দায় কাঁধে তুলে নিয়েছে : শফিকুর রহমান আধ্যাত্মিক, মানবিক দর্শন ও লোক ক‌বি সাধক হাসন রাজার মৃত্যুবার্ষিকী আজ আজ বড়লেখা মুক্ত দিবস : মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের আলোচনা সভা প্রয়াত ডা. পবন চন্দ্র দেবনাথের ছোট ভাই ব্রজেন্দ্র দেবনাথ আর নেই কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনর্বাসন প্রকল্প পরিদর্শনে রেলওয়ে সচিব- সম্পন্নের ডেডলাইনেও বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় বড়লেখায় খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় নফল রোজা শেষে ইফতার ও দোয়া মাহফিল কুলাউড়ায় আদালতের নির্দেশনা ভঙ্গ করে কৃষকদের জমিতে ফসল রোপণের অভিযোগ ছাতকের ইউএনও’কে বিদায় সংবর্ধনা প্রদান

পিয়ন থেকে কোটিপতি ঘুষ সম্রাট রিয়াজ

  • মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৫

Manual2 Ad Code

আনোয়ার হো‌সেন র‌নি ::

Manual7 Ad Code

সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কার্যালয় বর্তমানে ঘুষ ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে— এমন অভিযোগে তোলপাড় চলছে স্থানীয় মহলে। অফিসের ভেতরে-বাইরে যাঁরা নিয়মিত কাজ করেন, তাঁদের মুখে একটি নামই সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয়— রিয়াজ মিয়া। পিয়ন পদে চাকরি শুরু করা এই কর্মচারী এখন এলাকার মানুষের কাছে পরিচিত ‘কোটিপতি অফিস সহকারী’ হিসেবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মো. রিয়াজ মিয়া প্রায় এক যুগ ধরে ছাতক উপজেলা এলজিইডি কার্যালয়ে কর্মরত আছেন। প্রথমদিকে তিনি পিয়ন পদে যোগ দেন এবং প্রায় আট বছর ওই পদে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর তিনি অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে পদোন্নতি পান। নিয়ম অনুযায়ী, কোনো কর্মচারী একই কর্মস্থলে তিন বছর পূর্ণ করলে বদলি হওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু নানা কৌশল ও প্রভাব খাটিয়ে রিয়াজ মিয়া দীর্ঘদিন একই স্থানে বহাল রয়েছেন।

Manual6 Ad Code

এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাব ও অর্থের বিনিময়ে তিনি বদলির আদেশ ঠেকিয়ে রেখেছেন। দীর্ঘদিন একই জায়গায় থেকে প্রশাসনিক প্রভাব খাটানোর মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন এক দুর্নীতি সিন্ডিকেট।

Manual8 Ad Code

ছাতক এলজিইডি কার্যালয়ের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রিয়াজ মিয়া একাই নয়— তাঁর আশপাশে রয়েছে একদল অসাধু ঠিকাদার, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা এবং অফিসের কিছু সুবিধাভোগী কর্মচারী। তাঁদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে একটি “দুর্নীতি বান্ধব নেটওয়ার্ক”। এই নেটওয়ার্কের কাজ— সরকারি প্রকল্পে অনিয়ম, বিল আদায়ে ঘুষ বাণিজ্য, নথি ফাঁস ও তথ্য পাচার। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি ফাইল বা প্রকল্প-সংক্রান্ত তথ্য তিনি গোপনে ঠিকাদারদের কাছে সরবরাহ করেন। বিনিময়ে মোটা অঙ্কের ঘুষ আদায় হয়। কেউ ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানালে সেই ফাইল আটকে রাখা বা বিল অনুমোদন বিলম্বিত করা হয়।

এলজিইডির সঙ্গে নিয়মিত কাজ করা একাধিক ঠিকাদার জানিয়েছেন, রিয়াজ মিয়ার নির্দেশেই প্রতিটি প্রকল্পের বিল পাসের আগে দিতে হয় শতকরা দুই শতাংশ ঘুষ। কেউ ঘুষ দিতে দেরি করলে ফাইল স্থগিত হয়ে পড়ে, আবার কেউ প্রতিবাদ করলে অফিসের ভেতরে-বাইরে হয়রানির শিকার হন। একজন ক্ষুব্ধ ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,“ছাতক এলজিইডি অফিসে রিয়াজ ছাড়া কোনো কাজ হয় না। ফাইল জমা দিলেও সে না চাইলে সেটি অগ্রগতি পায় না। নিজেকে প্রকৌশলীর মতো আচরণ করে, এমনকি ঠিকাদারদের কাজের মান নিয়েও মন্তব্য করে। আসলে সে একজন অফিস সহকারী, কিন্তু অফিসটা এখন তার নিয়ন্ত্রণেই চলছে।”

এই চাঁদাবাজি ও ঘুষ সংস্কৃতির ফলে উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের গতি কমে গেছে। স্থানীয়দের দাবি, ফাইল আটকে রাখার কারণে বিলম্বিত হচ্ছে সড়ক, সেতু ও কালভার্ট নির্মাণকাজ, যা জনদুর্ভোগ আরও বাড়াচ্ছে।

Manual4 Ad Code

অফিসের ভেতরের কয়েকজন কর্মচারী জানান, পিয়ন থেকে অফিস সহকারী পদে উন্নীত হওয়ার পর রিয়াজ মিয়ার আচরণে এসেছে নাটকীয় পরিবর্তন। আগে সহকর্মীদের সঙ্গে ভদ্র আচরণ করলেও এখন নিজেকে “বড় কর্মকর্তা” মনে করেন। সহকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, অহংকারপূর্ণ ভাষা এবং হুমকিমূলক কথাবার্তায় অফিসে এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,“রিয়াজ অফিসে যেভাবে চলাফেরা করে, মনে হয় সে-ই সবকিছুর মালিক। প্রকৌশলী পরিবর্তন হলেও তার দাপট কমে না। ছোট থেকে বড় সবাই তাকে এড়িয়ে চলে।”

স্থানীয়ভাবে আলোচিত আরেকটি বিষয় হলো— রিয়াজ মিয়ার সঙ্গে ছাত্রলীগ-ঘনিষ্ঠ এক প্রভাবশালী ঠিকাদারের গভীর সম্পর্ক। স্থানীয়দের দাবি, ওই ঠিকাদারের বিল বা কাজের ফাইল অফিসে দ্রুত প্রক্রিয়াকরণ হয়। অনেকে বলেন, এ সম্পর্কের মূলেই রয়েছে পারস্পরিক আর্থিক লেনদেন। একজন সচেতন নাগরিক বলেন, “রিয়াজ ও ওই ঠিকাদারের মধ্যে এক ধরনের বোঝাপড়া আছে। কাজের টেন্ডার, বিল অনুমোদন, এমনকি প্রকল্পের অগ্রগতি— সব জায়গায় একে অপরকে সুবিধা দেয়।”

সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ঠিকাদার, এমনকি কিছু কর্মকর্তা— সবাই এখন মুখে মুখে রিয়াজের নাম উচ্চারণ করেন। তাঁর বিরুদ্ধে নানা ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুষ আদায় ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠায় প্রশাসনিক মহলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারাও বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের ভাষায়, এলজিইডির মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে একজন কর্মচারীর বছরের পর বছর একই স্থানে বহাল থাকা প্রশাসনিক ব্যর্থতা ছাড়া কিছু নয়।

“যে অফিসে একজন অফিস সহকারীই রাজত্ব চালায়, সেখানে সাধারণ ঠিকাদার বা জনগণের সেবা পাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। জেলা প্রশাসনের উচিত এসব অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া।”

রিয়াজ মিয়ার সম্পদের পরিমাণ নিয়েও নানা গুঞ্জন রয়েছে। স্থানীয়রা দাবি করেন, স্বল্প বেতনের সরকারি চাকরি করেও তিনি এখন একাধিক বাড়ি, জমি ও প্রাইভেট কারের মালিক। তাঁর নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মোটা অঙ্কের টাকার লেনদেন হয় নিয়মিত। যদিও এসব অভিযোগের কোনো সরকারি যাচাই এখনো হয়নি। একজন স্থানীয় সাংবাদিক বলেন,“রিয়াজ এখন এলাকায় ‘কোটিপতি অফিস সহকারী’ হিসেবে পরিচিত। সবাই জানে, সরকারি চাকরি করে এত সম্পদ অর্জন সম্ভব নয়। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে তদন্ত কমিশন চাইলে এই অফিস থেকেই উদাহরণ শুরু করতে পারে।”

অভিযোগগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে রিয়াজ মিয়া সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি আমার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করছি। অফিসে আমার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, সবাই তাদের দায়িত্ব অনুযায়ী কাজ করছে। কিছু ঠিকাদার ব্যক্তিগত স্বার্থে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে।”

এ বিষয়ে ছাতক উপজেলা এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমি সম্প্রতি এখানে যোগ দিয়েছি। রিয়াজ অনেকদিন ধরে এখানে আছে, তাই মানুষ ভাবে অফিসটা তার নিয়ন্ত্রণে। আমি বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিচ্ছি। যদি কোনো অনিয়ম পাই, অবশ্যই কর্তৃপক্ষকে জানাব। প্রশাসন চাইলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারে।”

ছাতক ও আশপাশের এলাকার সচেতন নাগরিকরা বলছেন, সরকারি অফিসে এ ধরনের ঘুষ সংস্কৃতি জনসেবাকে বাধাগ্রস্ত করছে। তাঁরা চান, রিয়াজ মিয়া ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত শুরু করে সত্য উদঘাটন করা হোক। একইসঙ্গে দাবি তুলেছেন— কোনো সরকারি কর্মচারী যেন একই কর্মস্থলে দীর্ঘদিন থাকতে না পারেন, তার জন্য কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

ছাতক এলজিইডি অফিসে রিয়াজ মিয়ার প্রভাব, ঘুষ বাণিজ্য ও প্রশাসনিক উদাসীনতা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। সরকারি দপ্তর যদি জনগণের সেবাকেন্দ্র না হয়ে ঘুষের কারখানায় পরিণত হয়, তবে উন্নয়নের লক্ষ্যপূরণ কেবলই মুখে মুখে থেকে যাবে— এমনই মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল। তাঁদের একটাই আহ্বান—“অভিযোগ সত্য হলে, দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে— নয়তো সরকারি অফিসে রিয়াজদের দাপট কখনোই শেষ হবে না।”#

সংবাদটি শেয়ার করুন


Deprecated: File Theme without comments.php is deprecated since version 3.0.0 with no alternative available. Please include a comments.php template in your theme. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২ - ২০২৪
Theme Customized By BreakingNews

Follow for More!