বড়লেখা প্রতিনিধি ::
জুড়ী উপজেলার লাঠিটিলা এলাকার কৃষিনির্ভর ৪টি গ্রামের ৩৬৪টি পরিবারের বসতবাড়ী ও শতবছরের কমলা বাগান রক্ষা করে বনবিভাগের প্রস্তাবিত সাফারী পার্ক নির্মাণের দাবিতে রোববার বিকেলে ভুক্তভোগী কমলা চাষী, জনসাধারণ ও শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছেন। গ্রামগুলো হচ্ছে উপজেলার সীমান্তবর্তী গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের জরিছড়া, লালছড়া, রুপাছড়া ও ডামাবাড়ী।
জুড়ী-লাঠিটিলা সড়কের লালছড়া মসজিদের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন সমাবেশে বক্তারা বলেন, ৪টি গ্রামে ৩৬৪টি পরিবারের ৩ শতাধিক পরিবার কমলা, বাতাবী, লেবু, জাম্বুরা, আদা লেবু, হাতকরাসহ লেবু জাতীয় কৃষিফসলী বাগানের উপর নির্ভর করে জীবিকা চালান।
সম্প্রতি সরকার অত্রাঞ্চলের কমলা চাষীদের সমন্বয়ে কমলাকে শিল্প হিসেবে গড়ে তুলার লক্ষ্যে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান (এনডিসি) লাঠিটিলার কমলা বাগান পরিদর্শন করে উক্ত এলাকার কমলা বাগান নিয়ে একটি শিল্প তৈরীর উদ্যোগ নেন। সম্প্রতি তারা লক্ষ্য করেন এলাকায় সাফারীপার্ক নির্মাণের লক্ষ্যে বনবিভাগ বিভিন্ন ধরণের জরিপ কার্যক্রম চালাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে তারা কিছুই বুঝতে পারেননি। সপ্তাহ খানেক পর জানতে পারেন কয়েক যুগ ধরে ৪টি গ্রামে বসবাসকারীদের উচ্ছেদ করে এখানে সাফারীপার্ক নির্মাণ করা হবে। এতে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
শতবর্ষের সাজানো বাড়ীঘর, কৃষি ফসলী বাগান ছেড়ে তাদের জীবিকা ও সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা হুমকির সম্মুখিন। প্রস্তাবিত সাফারীপার্ক নির্মাণ হলে সেটা এলাকার বৃহত্তর উন্নয়নে মাইলফলক ভূমিকা রাখবে। কিন্তু তাদের উচ্ছেদ করলে তারা কোথায় যাবে, না খেয়ে মরতে হবে। তাদের দাবী এখানকার বাসিন্দাদের উচ্ছেদ না করেও সাফারীপার্ক নির্মাণ সম্ভব।
লাঠিটিলা বিটের মোট আয়তন ৫৬৩১.৪০ হেক্টর। তন্মধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সড়কের দিলকুশা বাজার, ইসলামাবাদ চা বাগান সীমানা থেকে উত্তর দিকে জরিছড়া, লালছড়া ও রুপাছড়া গ্রামের ঘণবসতিপূর্ণ ৩৬৪টি পরিবারের বসবাস। এছাড়াও ৩টি মসজিদ, ১টি সরকারী ও ২টি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১টি সরকারী কমিউিনিটি ক্লিনিক রয়েছে। উক্ত পরিবারের মধ্যে প্রায় ৩৫০টি পরিবারই কৃষি নির্ভর। প্রতিদিন গড়ে ৪ শতাধিক লোক উক্ত ৪টি গ্রামের শতবছরের পুরনো কমলা, আদা, জাম্বুরা, বাতাবী লেবু, হাতকরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির কৃষি ফসলী বাগানে কাজকর্মে নিয়োজিত। উক্ত বাগানের উপর নির্ভর করে চলে তাদের পরিবার। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার খরচ, চিকিৎসাসহ সার্বিক ব্যয়।
উক্ত গ্রামের ঘন বসতিপূর্ণ পরিবার সমূহকে পূনর্বাসন ব্যতিত উচ্ছেদ করতঃ প্রস্তাবিত পার্ক বাস্তবায়ন হলে আবাসস্থল পরিবর্তনের ফলে ৪ গ্রামের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীর লেখাপড়া মাঝপথে বন্ধ হয়ে যাবে। প্রস্তাবিত পার্ক নির্মাণের জন্য বন বিভাগের মোট জমির চাহিদা ১০০০ একর। সেক্ষেত্রে এখানে আমাদের ঘন বসতিপূর্ণ উল্লেখিত ৪টি গ্রাম ও শতাধিক বছরের লালিত বসতবাড়ী ও কৃষি ফসলী বাগান রক্ষা করে গ্রামের শেষ সীমানা থেকে উত্তর ও পূর্ব দিকে চাহিদার চেয়ে কয়েক গুন বেশি জমি পতিত রয়েছে, সেখানে সাফারীপার্ক নির্মিত হলে সর্বমহল উপকৃত হবেন।#
Leave a Reply