বড়লেখা প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজার জেলার জিআই পণ্য ‘আগর-আতর শিল্পের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক দিনব্যাপি সেমিনার সোমবার মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেমিনারের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম।
প্রধান অতিথি হিসেবে কর্মশালার উদ্বোধন করেন সিলেট বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ সিদ্দিকী। সমাপনি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার বলেছেন, আগর-আতর শিল্পকে গার্মেন্টস শিল্পের মতো বৃহৎ রপ্তানি খাতে পরিণত করতে সরকার নানামূখি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারি এই পণ্য উৎপাদন, পরিবহন ও বিদেশে রপ্তানিতে ব্যবসায়িরা যাতে কোনো ধরণের জটিলতা কিংবা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখিন না হন সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সেমিনারে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সম্পুর্ণ বৃক্ষে উন্নতমানের আগর রেজিন সঞ্চয়ন প্রযুক্তি উদ্ভাবন শীর্ষক প্রকল্পের বিভাগীয় কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালক ড. মোহাম্মদ জাকির হোসাইন। সিলেট বিভাগে আগর চাষ ও সম্ভাবনা বিষয়ক আলোচনা করেন আগর-আতর ব্যবসায়ি ও সিলেট ক্রিড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সিআইপি মহিউদ্দিন আহমদ সেলিম। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবজিৎ সিংহ, মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আব্দুস সালাম চৌধুরী, মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদর্শন কুমার রায়, বড়লেখা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আসলাম সারোয়ার, কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
আগর-আতর শিল্পের উন্নয়নে সমস্যা ও সম্ভাবনা তোলে ধরে বাংলাদেশ আগর এন্ড আতর ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সহসভাপতি আশরাফ মুহিত ছয়েফ বলেন, প্রায় ৪শ’ বছর ধরে বংশানুক্রমে বড়লেখার সুজানগরে আগর ব্যবসা চালু থাকলেও ইতোপূর্বে কোন সরকার এই প্রাচীণ ব্যবসার পৃষ্ঠপোষকতা করেনি। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগর শিল্পের সম্ভাবনা অনুধাবন করে ২০১৩ সালে আগরকে ক্ষুদ্র শিল্প ঘোষণা করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে সহযোগিতা করার নির্দেশ দেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আগরকে ক্ষুদ্র শিল্প হিসাবে সরকারি গেজেট প্রকাশ করে। বাংলাদেশ আগর এন্ড আতর ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোটার্স এসোসিয়েশনকে টি,ও শাখায় লাইসেন্স প্রদান করেন। ২০১৪ সাল থেকে ইপিবি মৌলবীবাজার জেলার রপ্তানি পণ্য হিসাবে ‘এক জেলা এক পণ্য’ ওডিওপি কর্মসুচির আওতায় নিয়ে সহায়তা করে আসছে। ২০১৬ সালে শিল্প মন্ত্রণালয় আগরকে অগ্রাধিকার খাতের আওতায় নিয়ে সহায়তা প্রদান করছে। রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় আগর পণ্য রপ্তানিতে ২০% প্রণোদনা প্রদানে ব্যবসায়িরা কুরিয়ার সার্ভিস ও প্যাসেঞ্জার ল্যাগেজে প্রেরণ পরিহার করে বৈধ পথে রপ্তানি শুরু করেন। কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালেও প্রায় ১৫০ কোটি টাকার আগর-আতর রপ্তানি হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি আগর-আতরের বিরাট চাহিদা রয়েছে। এর উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ ও প্রতিবন্ধকতা দূর করা হলে দেশে এর উৎপাদন কয়েক গুন বাড়বে, বছরে হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে পাশাপাশি ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সারাদেশে প্রায় ২ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই পণ্য উৎপাদনে, শ্রম বিক্রয়ে ও বিপননে নিয়োজিত। আগর আতর শিল্পের উন্নয়নে আগর-আতর ফ্যাক্টরির গ্যাস বিল বাণিজ্যিক হারে না নিয়ে ক্ষুদ্র শিল্প হারে অথবা চা শিল্পের ন্যায় নির্ধারণ, বন বিভাগে সৃজিত প্রাপ্ত বয়স্ক আগর গাছ ‘২০১২ সালে আগর গাছ বিক্রয় নীতিমালা’ অনুযায়ি বিক্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ, আকাশপথে দ্রুত আগর পণ্য পরিবহনের জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের স্পেস রিজার্ভেশন কোটা প্রদান, দ্রুততম সময়ে সাইটিস সাটিফিকেট সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহন, দীর্ঘ মেয়াদি বড় অঙ্কের ব্যাংক ঋণ প্রদানসহ ১২টি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান আগর-আতর শিল্পের এই ব্যবসায়ি নেতা।
উন্মুক্ত আলোচনা অংশ নেন বড়লেখার সুজানগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আগর আতর রপ্তানি কারক দুবাই প্রবাসি ব্যবসায়ি বদরুল ইসলাম, বাংলাদেশ আগর এন্ড আতর ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সহসভাপতি আব্দুল আজিজ, আব্দুল কুদ্দুছ, সাধারণ সম্পাদক বাবুল আহমদ, সদস্য আজিজ আশরাফ আল মুহিত, বিডা জেলা প্রশিক্ষণ সমন্বয়ক মো. নিয়াজ মোর্শেদ, সাংবাদিক আব্দুর রব, দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মুহিবুর রহমান কামাল, দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউপি সদস্য আব্দুল মন্নান।
Leave a Reply