আব্দুর রব, বড়লেখা ::
জুড়ীর ভোগতেরা কমিউনিটি ক্লিনিক বড়লেখার অন্তঃসত্ত্বা খাদিজা আক্তারের সন্তান জন্ম দানের মাধ্যমে হাজার তম স্বাভাবিক প্রসবের রেকর্ড গড়েছে। গ্রামের ভেতরের ছোট্ট এ কমিউনিটি ক্লিনিকে ৯ বছর ধরে বিনা খরচে স্বাভাবিক প্রসব কার্যক্রম চলছে। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, স্বাভাবিক প্রসবে সিলেট বিভাগের মধ্যে ক্লিনিকটি শীর্ষস্থানে রয়েছে।
স্বাভাবিক ডেলিভারীর ক্ষেত্রে ভোগতেরা কমিউনিটি ক্লিনিকের সুনাম দেশের গন্ডি পেরিয়ে আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ে। যার কারণে সাবেক জাতিসংঘ মহাসচিব বানকি মুন ২০১২ সালে এ কমিউনিটি ক্লিনিক পরিদর্শণের আগ্রহ প্রকাশ করেন। ২০১৫ সালে ঢাকাস্থ কানাডিয়ান হাইকমিশনার ক্লিনিকটি ভিজিট করেন।
জানা গেছে, বড়লেখা উপজেলার অন্তঃস্বত্ত্বা খাদিজা আক্তারের (২৫) প্রসবব্যথা ওঠায় মঙ্গলবার সকালে স্বজনেরা তাকে ভোগতেরা কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়ে যান। ক্লিনিকের বেসরকারি সিএসবিএ লিপা খানম ৯টা ২০ মিনিটে খাদিজার একটি ফুটফুটে পুত্রসন্তানের নরমাল ডেলিভারি করান। এ সফল ডেলিভারির মাধ্যমে ক্লিনিকটি হাজার তম স্বাভাবিক প্রসবের রেকর্ড গড়ে। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তারা ও ক্লিনিক পরিচালনা কমিটির সদস্যবৃন্দ। প্রসূতির স্বজনরা খুশিতে সকলকে মিষ্টিমুখ করান।
স্থানীয় দরিদ্র পরিবারের গৃহবধু প্রসবকর্মী লিপা খানম জানান, প্রসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০১৪ সালের জুনে তিনি এ ক্লিনিকে যোগদান করেন। তার হাতে এ পর্যন্ত ৭৪৮ নবজাতকের সফল প্রসব হয়েছে। তবে এ কাজের বিনিময়ে তিনি সরকারি কোনো পারিশ্রমিক পান না। কোনো দরিদ্র অন্তঃসত্ত্বার প্রসব ব্যাথার খবর পেলেই ছুটে যান ক্লিনিকে।
ক্লিনিকের সিএইচসিপি হানিফুল ইসলাম জানান, স্থানীয় বাসিন্দা মইনুল ইসলাম ক্লিনিকের জমি দান করেন। এরপরই স্বাস্থ্য বিভাগের আন্ডারে ক্লিনিকটির যাত্রা শুরু। ২০১২ সালের ১২ জানুয়ারি সেখানে প্রথম স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে শিশুর জন্ম হয়। এরপর ধীরে ধীরে সেই সংখ্যা বাড়তে থাকে। শুধু জুড়ী নয়, আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকেও এখানে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের অন্তঃসত্ত্বা নারীরা সেবা নিতে আসেন। ক্লিনিকে জন্ম নেওয়া হাজার শিশুর মধ্যে ৫৪০ জন মেয়ে ও ৪৬৭ জন ছেলে। এর মধ্যে যমজ হয়েছে ৭ জন। এ দিন ক্লিনিকের সফলতা দেখতে উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ মোঈদ ফারুক, ইউএনও সোনিয়া সুলতানা, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রিংকু রঞ্জন দাস, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রঞ্জিত শর্মা, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সমরজিৎ সিংহ, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাছুম রেজা ছুটে যান।
উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ মোঈদ ফারুক বলেন, রেকর্ড সৃষ্টিকারী এ কমিউনিটি ক্লিনিকটি নানা সমস্যায় জর্জরিত। তিনি ক্লিনিকের জন্য একটি ডেলিভারি টেবিল ও ক্লিনিকের সামনে টিনসেড বারান্দা নির্মাণ করে দিবেন। ক্লিনিকের মাঠ ভরাটসহ উন্নয়নমূলক কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করার ব্যবস্থা নিবেন।
ইউএনও সোনিয়া সুলতানা জানান, এ কমিউনিটি ক্লিনিকটি বাংলাদেশের শ্রেষ্ট ক্লিনিকের মধ্যে অন্যতম। এর সুনাম রক্ষা করা সকলের দায়িত্ব। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাছুম রেজা বলেন, নানা সমস্যার মধ্যেও এ কমিউনিটি ক্লিনিকটি হতদরিদ্র পরিবারের মহিলাদের নরমাল ডেলিভারিতে অসামান্য অবদান রাখছে। কিèনিকের প্রসবকর্মী সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা পান না শুনে কষ্ট লাগছে। বিনা পারিশ্রমিকে দরিদ্র পরিবারের কোনো গৃহবধুর পক্ষে এতবড় সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কাজ চালিয়ে যাওয়া মোটেও সম্ভব নয়। তিনি এব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্ঠি আকর্ষণ করেন।#
Leave a Reply