এইবেলা, কুলাউড়া ::
বনবিভাগের সরকারি কাজে সহযোগিতা করতে গিয়ে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নে খাসিয়াদের পানকাটার অভিযোগে ১৪ জন বনভিলেজারসহ অজ্ঞাতনামা ৪০-৫০ জনকে মামলার আসামী হতে হয়েছে। আসামী ধরতে র্যাব পুলিশ চালাচ্ছে সাড়াশি অভিযান। অভিযানের ভয়ে সন্ধ্যা হলেই ইউনিয়নের ৪ গ্রাম পূরুষ শূন্য হয়ে পড়ে। অথচ একই ঘটনায় বনবিভাগের করা মামলায় আসামী গ্রেফতারে পুলিশ কিংবা র্যাবের কোন ভুমিকা না থাকায় জনমনে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
রোববার (২৯ নভেম্বর) সরেজমিন কর্মধা ইউনিয়নে গেলে বনবিভাগ ও স্থানীয় লোকজন জানান, ফটিগুলি, নলডরি, কর্মধা ও হোসনাবাদ এলাকার বেশিরভাগ বাসিন্দা যারা বনবিভাগের সামাজিক বনায়নের উপকারভোগী বা বন ভিলেজার। এসব গ্রামের লোকজন জানান, বনবিভাগের সরকারি কাজে তাদের সহযোগিতা করতে হয় বাধ্যতামুলক। সহযোগিতা না করলে উপকারভোগী হিসেবে অনেক সময় বনবিভাগের কর্মকর্তাদের বিরাগভাজন হতে হয়।
এসব বনভিলেজাররা আরও জানান, বনবিভাগকে সহযোগিতা করতে গেলেই খাসিয়াদের করা মিথ্যা মামলায় আসামী হতে হয়। এসব গ্রামের বাসিন্দা বনভিলেজারদের বিরুদ্ধে ৫-৭টি করে খাসিয়াদের করা মিথ্যা মামলা রয়েছে। সন্ধ্যা নামে কর্মধা ইউনিয়নের র্যাব পুলিশের আতঙ্ক নিয়ে। অজ্ঞাতনামার তালিকায় নিরীহ মানুষকে গ্রেফতার করা হতে পারে এই ভয়ে কোন পূরুষ মানুষ রাতে গ্রামে গুমায় না।
বনবিভাগ জানায়, গত ২১ নভেম্বর সহকারি বন সংরক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিকসহ বনবিভাগের লোকজন ও উপকারভোগীসহ নুনছড়া মৌজায় তাদের একটি সামাজিক বনায়নের চারা বাগানের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শনে যেতে চাইলে খাসিয়ারা বাঁধা দেয়। বনবিভাগের লোকজন খাসিয়াদের বাঁধা উপেক্ষা করে অগ্রসর হতে চাইলে পূর্বপরিকল্পিতভাবে একনালা বন্দুক, তীর ধনুক, গুলতি ও ধারালো দাসহ বনবিভাগের লোকজনের উপর হামলা চালায়। এতে বনপ্রহরী মো. আব্দুল হালীম ও বনভিলেজার আমির আলী আহত হন। খাসিয়াদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে বনবিভাগের লোকজন ফিরে আসেন। আহতদের কুলাউড়া হাসপাতালে চিকিৎসা করান।
এঘটনায় নলডরি বিটের বিট কর্মকর্তা অজুন কান্তি দস্তিদার কুলাউড়া থানায় ৬ জনের নামোল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন।
বিট কর্মকর্তা অর্জুন কান্তি দস্তিদার জানান, খাসিয়াদের হামলার ঘটনায় রাতে মামলা দায়ের করি এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বিষয়টি অবগত করি। কিন্তু খাসিয়ারা ঘটনার দু’দিন পর ২৩ নভেম্বর থানায় গিয়ে পানকাটার অভিযোগে নিরীহ বনভিলেজারদেরকে আসামী মামলা (নং ২৫৪, তারিখ ২৩/১১/২০) দায়ের করে। পুলিশ সেই মামলাটি রেকর্ডভুক্ত করেছে। যেখানে ১৭ জনের নাম এবং আরও অজ্ঞাতনামা ৪০-৫০ জনকে আসামী করেছে। খাসিয়াদের হামলার শিকার হয়ে আমরা ফিরে আসলাম। এসময় পান গাছ কাটার কোন ঘটনা ঘটেনি। খাসিয়ারা নিজেরা পান গাছ কেটে মিথ্যা মামলা করেছে।
কুলাউড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা রেজাউল হক জানান, এভাবে খাসিয়ারা মামলা দিলে পাহাড় রক্ষা করা সম্ভব হবে না। বনভিাগের মামলায়তো কোন আসামী গ্রেফতার হয় না রহস্যজনক কারণে। অথচ খাসিয়াদের মিথ্যা অভিযোগে করা মামলায় নিরীহ বনভিলেজাররা এমনকি সাধারণ মানুষও নির্বিঘেœ ঘুমাতে পারে না। রাষ্ট্রীয় কাজে গিয়ে যদি মানুষ মামলা হামলার শিকার হয় তাহলে কেউ আর রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় এগিয়ে আসবে না। তাছাড়া বন বিভাগের দায়িত্ব পালনে যারাই কুলাউড়া আসে। তারা বেশি দিন এখানে টিকতে পারে না।
কুলাউড়া থানা অফিসার ইনচার্জ বিনয় ভুষন রায় জানান, আমরা উভয়পক্ষকে নিয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে একটা শান্তিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবো।
এব্যাপারে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এটিএম ফরহাদ চৌধুরী জানান, রাষ্ট্রীয় কাজে সহযোগিতাকারীদের সহযোগিতা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তাছাড়া উভয়পক্ষ যাতে হয়রানির শিকার না হয়, এ ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেবো।#
Leave a Reply